Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ছোট মাছের পুষ্টি

সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। শারীরিক সুস্থতার জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত পরিমিত পরিমাণ সুষম খাদ্য গ্রহণ। সুষম খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলো হলো- আমিষ, শ্বেতসার, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। মাছ ও মৎস্যজাত দ্রব্য সুষম খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।  ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ বিখ্যাত প্রবচনটি খাদ্য হিসেবে মাছের প্রতি আমাদের আকর্ষণ, প্রয়োজনীয়তা ও নির্ভরতার সূচক নির্দেশ করে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় রীতি নীতির কারণেও মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য।
 

এ দেশে যেসব মাছ আছে, আকার অনুসারে সেগুলোকে মোটামুটি বড়, মাঝারি ও ছোট এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। রুই, কাতলা, আইড়, মৃগেল, বোয়াল, কালিবাউস, পাঙ্গাশ, চিতল, ইলিশ এগুলো বড় মাছের মধ্যে অন্যতম। কৈ, ফলি, রূপচান্দা, মাগুর, সরপুঁটি, বেলে, শিং- এসব মাছকে মাঝারি আকারের মাছ হিসেবে ধরা হয়। আবার মলা, ঢেলা, কেঁচকি, কাজলি, পুঁটি, টেংরা, চাঁদা, বাতাসি, খলসে এগুলোকে ছোট মাছ বলা হয়। এ হলো বড়, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা মাত্র। এছাড়া আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরে আরও অনেক রকমের মাছ পাওয়া যায়।
 

ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, বড়, মাঝারি বা ছোট মাছে কোনো তফাৎ নেই। বড় মাছের পুষ্টিগুণ যা, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছের পুষ্টিগুণও তা। অথচ দামের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, বড় মাছের দাম এতই চড়া যে তা ক্রয় করা আমাদের অনেকেরই ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ছোট মাছ দামে অনেক সস্তা। বড় মাছের মতো ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে বলে ছোট মাছও আমিষ জাতীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ হলো ১৪-১৯ ভাগ এবং মাছের আমিষ হলো একটা উন্নত মানের আমিষ। এ আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণের কাজে লাগে বেশি।
 

গর্ভবতী মহিলার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন ঠিকমতো হওয়ার জন্য এবং প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ তৈরির জন্য তাদের নিত্যদিনের খাবারে আমিষের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। জন্মের পর পরই শিশুদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এ সময়ে শিশুদের শরীরের এ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আমিষ জাতীয় খাবারের প্রয়োজন অত্যধিক। আমিষের অভাবে শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শরীর খাটো হয়ে যায় এবং শরীরের ওজন কমে যায়। এ অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে শিশুদের কোয়াশিয়রকর এবং ম্যারাসমাস নামক মারাত্মক রোগ হয়। ম্যারাসমাস রোগে শিশুরা একেবারে শীর্ণ ও হাড্ডিসার হয়ে যায়, আর কোয়াশিয়রকর রোগে শরীর ফুলে যায়।
 

মায়ের বুকের দুধই হচ্ছে শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য। তবে শিশুর পাঁচ মাস বয়স থেকে শুধুমাত্র মায়ের দুধই তার শরীরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই পাঁচ মাস বয়স থেকে শিশুকে মায়ের দুধের সাথে সাথে পরিপূরক খাবার দিতে হবে। শিশুর পরিপূরক খাবারে যেন একটু আমিষ থাকে সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। এ আমিষটা  কিন্তু ছোট মাছের আমিষও হতে পারে। ডালে-ভাতে রান্না করা নরম খিচুড়ি শিশুর জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ভালো পরিপূরক খাবার। খিচুড়িতে একটু আলু, খানিকটা সবুজ শাক এবং একটু ছোট মাছ পিষে দেয়া যেতে পারে। এ খাবার শিশুকে বারে বারে অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। নিয়ামিতভাবে এসব পরিপূরক খাবার খাওয়ালে শিশুরা কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস ও অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাবে এবং শিশু সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
 

আমিষ ছাড়াও ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’। এর প্রসঙ্গে মলা ও ঢেলা মাছের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ দুটি মাছে ভিটামিন ‘এ’র পরিমাণ খুব বেশি। খাবারে ভিটামিন ‘এ’ অভাব হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘রাতকানা’। ক্রমাগত ভিটামিন ‘এ’র অভাব চলতে থাকলে চক্ষু প্রদাহ, চক্ষু শুষ্কতা এবং চোখে এক প্রকার ঘা হয়। এভাবে আস্তে আস্তে চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হয়ে যায়। খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতিজনিত কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে হাজার হাজার শিশু ও ছোট      ছেলেমেয়ে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং রাতকানা রোগে ভুগছে।
 

ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ মলা ও ঢেলা মাছ আমাদের দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। শিশুকাল থেকে এসব ছোট মাছ এবং নানা রকমের শাকসবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করালে ছোট ছেলেমেয়েদের চোখের এসব মারাত্মক ব্যাধি ও অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে রক্ষা করা যায়। ছোট মাছ খাওয়ার আর একটা বিশেষ দিক হলো যেসব ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায়, তা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে শিশু ও ছোট ছেলেমেয়েদের ‘রিকেটস’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। খাবারে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে গর্ভবতী মহিলাদের ‘অস্টিওম্যালেসিয়া’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। এ রোগে প্রসবকালে মহিলাদের খুব কষ্ট হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া খাদ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত কারণে শিশুদের কণ্ঠের মাংসপেশির খিঁচুনি হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ছোট মাছকে সিদ্ধ করে অন্যান্য শাকসবজির সাথে শিল পাটায় পিষে খেলে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটানো যায়। এভাবে ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত নানাবিধ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভবপর। লটিয়া, রিটা, পোপা এসব সামুদ্রিক ছোট মাছগুলো আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন ছাড়াও অত্যন্ত দরকারি আরেকটি পুষ্টি উপাদান আয়োডিনের চাহিদা পূরণ করে। আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আয়োডিনের অভাবে গলগ- রোগ হয়। এছাড়া আয়োডিনের অভাব হলে গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, প্রসবোত্তর মৃত্যু, বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম গ্রহণ করতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসহ আয়োডিনের চাহিদা পূরণের জন্য সামুদ্রিক ছোট মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 

কাজেই এ কথা বলা যায়, বড় মাছের মতো ছোট মাছও অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। অনেক দামি বড় মাছ না খেতে পারলে আপস করার কোনো কারণ নেই। দেহের পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বড় মাছের মতো ছোট মাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ছোট মাছ বলে তার প্রতি অবহেলা বা অনীহা প্রদর্শন না করে এগুলোকে সামর্থ্যনুযায়ী নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

 

মো. আবদুর রহমান*

*উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon